Date : 2024-04-29

মুভি রিভিউ: বর্ণপরিচয়

ওয়েব ডেস্ক: ইংরাজী ছবির আদলে মনতাজের উপর মনযোগ দিয়ে থ্রিলার ছবির প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে টলিউডের পরিচালকদের। প্রথমেই বলি, এই ছবিতে কোথাও আপনি ছবির নাম “বর্ণপরিচয়” রাখার যুক্তি খুঁজে পাবেন না। ছবির দুটি বিপরীতমুখী লিড রোলে টলিউডের দুই মেগাস্টার যিশু সেনগুপ্ত এবং আবির চট্টোপাধ্যায়কে এই প্রথম একসঙ্গে দেখা গেল থ্রিলার ছবিতে। বোমকেশ বক্সির চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ দুজনেরই হয়েছে, ফলে অ্যাকশন থ্রিলারের মুডে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা আছে।

পরিচালক- মৈনাক ভৌমিক

অভিনয়- যিশু সেনগুপ্ত, আবির চট্টোপাধ্যায়, প্রিয়াঙ্কা সরকার, মিঠু চক্রবর্তী

ছবির ধরন- Action, Thriller

সময় -1 h 44 min

কিন্তু অভিজ্ঞতার প্রভাব সেইভাবে দেখা যায়নি ছবিতে। তুখোর বুদ্ধির গোয়েন্দা অফিসারের ভূমিকায় ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত এবং তার বিপরীত চরিত্রে ছিলেন প্রতিহিংসাপ্রবন ঠান্ডা মাথার খুনির অর্ক ভট্টাচার্য ওরফে অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্যায়। দুজনের সাপ-লুডো খেলার মাঝে বসে থাকলে আপনি আনায়াসেই বুঝে নিতে পারবেন এরপরের দৃশ্যটা কি হতে চলেছে। এমকি থ্রিলার ছবি দেখার অভিজ্ঞতা যাদের নেই তারাও অনায়াসেই বলবেন অত্যন্ত হালকা চিত্রনাট্য। ১ ঘন্টা ৪৪ মিনিটের ছবিতে টানটান রহস্যের ছোঁয়া নেই বললেই চলে।

কিন্তু ছবির সিনেমাটোগ্রাফি কদর করার মতো। ঘিঞ্জি কলকাতা শহরের মধ্যেও যে হলিউডি থ্রিলারের টাচে চোর-পুলিশের বাইক চেস করার দৃশ্য রয়েছে বাংলা ছবির নিরিখে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলের কাজ সেখানে যথেষ্ট ভালোই বলা চলে। ছবিতে আলো ছায়ার খেলাও ভালোই বলা যায়। থ্রিলারের অন্ধকারাচ্ছন্ন রহস্যের মাখোমাখো ব্যাপার রয়েছে। ছবিতে অভিনয়ের নিরিখে আবির চট্টোপাধ্যায় যিশুর বিপরীতে থেকে বেশ মনোযোগী ছিলেন নিজের চরিত্রের ব্যাপারে। যদিও অভিনয়ের দিক থেকে ঠান্ডামাথার খুনির চরিত্রের ধারে পাশেও যেতে পারেননি তিনি।

লাং ক্যান্সেরের রোগী হয়েও তাঁর শরীরে অসুস্থতার কোন চিহ্ন খুঁজে পাবেন না। মাঝে মাঝে ভুলক্রমে কাশির মাধ্যমে আপনাকে স্ক্রিপটের কথা মনে করিয়ে দেবে অভিনেতা। যদিও শেষ দৃশ্যে ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সময় আবিরের যিশুকে হাত নেড়ে দেখানোটা হাস্যকর বললেও কম বলা হয়। অন্যদিকে যিশু সেনগুপ্ত নিজের গোয়েন্দা চরিত্রের থেকেও বেশি জোর দিয়ে ফেলেছেন মদ্যপানে নেশাগ্রস্থ অভিনয়ের দিকে। কোথাও কোথাও ওভার অ্যাকটিং বোঝা গেছে। গোয়েন্দার অভিমানী স্ত্রী মালিনীর চরিত্রে অভিনয়ের যথেষ্ট সুযোগ থাকলেও চেষ্টা করেননি প্রিয়াঙ্কা সরকার। তাঁর অভিনয় প্রথম থেকেই ভীষণ আবেগহীন। ছোট্ট গোগোলের ভূমিকায় দীপ্র সেন চমৎকার।

একটি শিশুর চরিত্রে যতটুকু সারল্য দরকার, পরিচালক সেটি তাকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন। গোগোলের দিদুনের ভূমিকায় মিঠু চক্রবর্তীও অনায়াস, স্বচ্ছন্দ অভিনয় করেছেন। যাই হোক, গল্পে বিমা কোম্পানীতে কর্মরতা অর্ক ভট্টাচার্যের স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার প্রতিহিংসার জন্ম হয়। বীভৎস ষড়যন্ত্র করে সে প্রতিশোধ নিতে একে একে খুন করতে শুরু করে এবং শেষে প্রশাসন বিশেষ করে গোয়েন্দা অফিসার ধনঞ্জয়কে সে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। এমনকি অচেনা নম্বর থেকে একজন গোয়েন্দাকে ফেন করে বোকা বানানোর চেষ্টাটা ছবিতে আরও হাস্যকর মনে হবে।

এই গল্পের মধ্যে পরিচালক বেদের পঞ্চভূত আর মহাভারতের অর্জুন আর কর্ণের মধ্যে শক্তির পরীক্ষাকে চিত্রনাট্যের মধ্যে রেখে আরও দুর্বোধ্য করে দিয়েছেন। বিশেষত, এই সাসপেন্স থ্রিলারে এসব না রাখলেও দিব্যি চলত। বরং বার বার পঞ্চভূতের কথা আসার ফলে দর্শক অযথা গোলক ধাঁধায় পড়বেন। ছবিতে খুনী কে তা প্রথম থেকেই জেনে ফেলছে দর্শক, ফলে সাসপেন্সের ধাঁধা জটমুক্ত শ্যাম্পু করা চুলের মতো মসৃন মনে হবে। অনুপম রায়ের গান আর সুরে “২২ শে শ্রাবন”র ছবির টাচ পাবেন। সবশেষে বলা যায় ২ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস ক্রাইম থ্রীলার না ভেবে নিছক বিনোদন হিসাবে ছবিটি দেখতে পারেন। তবে ছবিটি আরও স্বল্পদৈর্ঘ্যের হলে ভালো হতো।