ওয়েব ডেস্ক:তিথি নক্ষত্র মেনে বাঙালির মহা পার্বণে নিঃশব্দে ঢাকে কাঠি পড়ল আজ। শেওড়াফুলি রাজবাড়ি, কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বাড়ি সহ একাধিক শহর ও জেলার বনেদি বাড়িতে কৃষ্ণানবমী তিথিতে মহামায়ার ঘটস্থাপনা হয়ে গেল। চণ্ডিপাঠ, কল্পারম্ভ সহ একাধিক অনুষ্ঠান ও রীতি রেওয়াজের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গেল মাতৃবন্দনা। দেবী সর্বমঙ্গলারূপে শেওড়াফুলি রাজবাড়িতে পূজিতা হন দেবী দুর্গা। বংশের রীতি, কৃষ্ণপক্ষের নবমী তিথিতে হয় দেবীর বোধন। সেই রীতি মেনেই আজ ভোরে রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে শুরু হয়ে গেল পুজো। এই পুজোকে কেন্দ্র করে রয়েছে অনেক লৌকিক ও অলৌকিক কথা। বর্ধমানের পাটুলির নারায়ণপুরে রাজত্ব করতেন দত্ত পরিবার।
স্বয়ং সম্রাট আকবর নাকি তাদের জমি দিয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে নাকি নদী ভাঙনে গ্রাস করেছিল জমি। ভিটে মাটি হারিয়ে বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে শেওড়াফুলি এসে বসবাস করতে শুরু করেন মনোহর দত্ত রায়। বর্ধমানে থাকাকালীন অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছিল মনোহর দত্ত রায়ের সঙ্গে। বর্ধমানের আটিসারা গ্রামে পুকুর খনন করার সময় স্বপ্নাদেশ পান মনোহর দত্ত রায়। মাটির তলা থেকে পান দেবী দশভূজার অষ্টধাতুর মূর্তি। ভাঙনে সমস্ত জমি নদীর গ্রাসে চলে যাওয়ার পর শেওড়াফুলির কাছারি বাড়িতে এসে নাটমন্দিরে দেবী দশভূজার মূর্তিকে সর্বমঙ্গলা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেন। ২৮৬ বছর ধরে সেই প্রতিষ্ঠিত মূর্তিতেই চলে আসছে শারদোৎসব। সারা বছর চলে নিত্যপূজা কিন্তু শরতের আকাল বোধন ও বসন্তকালের বাসন্তীপূজার সময় রাজবাড়ির এই মন্দিরে বিশেষভাবে চলে মাতৃ আরাধনা। হুগলী নদীর পশ্চিম পাড়ে ছিল দত্তদের প্রতিপত্তি ছিল চোখে পড়ার মতে।
রাজবাড়ির তরফে এখানে অনেক মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়।গুপ্তিপাড়ায় রাধারমনের মঠ, বাঁশবেড়িয়া হংসেশ্বরী মন্দির, শেওড়াফুলিতে নিস্তারিণী কালী মন্দির, শ্রীরামপুর, মোহনপুর ও গোপীনাথপুর এই তিনটি জনপদে এক করে রামের মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রামচন্দ্র রায়। উত্তরপাড়ায় মা ভদ্রকালী মন্দির, রামসীতা ঘাট, হাওড়ার রামরাজাতলায় রামসীতা মন্দির এ সবই শেওড়াফুলির রাজাদের তৈরি। রাজবাড়িতে আষাঢ় মাসে দেবীর জন্মতিথিতে হয় বিশেষ উৎসব। আজও প্রথা মেনে মহালয়ের সাতদিন আগে থেকে এখানে ঘটস্থাপনার মাধ্যমে শুরু হয় দূর্গাপুজো। শরিকি ভাগাভাগির কারণে ভাগ হয়েছে পুজোর। কিন্তু নষ্ট হয়নি জৌলুস। প্রতি বছর পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেয় শরিকেরা। মহালয়ার আগে থেকেই গম গম করে ঠাকুর দালান। আলোর রোশনাই, আর প্রিয়জনের বার্তালাপে হাসির রোল, ঢাকের বোল। একদিকে চলে ঘটস্থাপনার মধ্যে দিয়ে কল্পারম্ভ, এই দিনটি থেকেই শুরু হয় ফাইনাল কাউন্ডাউন। ভেজা মাটিতে রঙের প্রলেপ দিতে চূড়ান্ত ব্যস্ততা নজরে আসে কুমোর পাড়ায়। রঙ শুকিয়ে মহালয়ের দিনেই মৃন্ময়ী মূর্তির চক্ষুদান, প্রাণ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই শুরু হয় দুর্গোৎসব। হাসি, ঠাট্টা আনন্দের সেই চারটে দিনের অপেক্ষায় সারা বছর প্রহর গোনা।