সঞ্জু সুর, সাংবাদিক : বিভিন্ন প্রকল্প মিলিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের (পশ্চিমবঙ্গের) বকেয়া প্রায় এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু গ্রামীণ বিকাশেই রয়েছে প্রায় ষোলো থেকে সতেরো হাজার কোটি টাকা। বুধবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রাপ্য এই বকেয়া নিয়েই তথ্য সহ দাবি জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২১ সালে তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাখির চোখ করেছেন রাজ্যে শিল্পায়ন, এবং শিল্পায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান। তবে গ্রামীণ বিকাশেও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে তাঁর সরকার। সেইসব প্রকল্পের অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী থাকতে হয় রাজ্যকে। কারণ এমন বেশকিছু প্রকল্প রয়েছে যেগুলো যৌথভাবে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থে চলে। কিন্তু দূর্নীতির অভিযোগে এমন বেশকিছু প্রকল্পে টাকা দেওয়া বন্ধ করেছে কেন্দ্র সরকার। বিশেষ করে MGNREGA বা একশো দিনের কাজের ক্ষেত্রে ভুয়ো জব কার্ডের অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিন ধরেই টাকা দিচ্ছে না পঞ্চায়েত ও গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রক। বারবার করে তদবির করে, আবেদন করেও এই টাকা পাওয়া যায় নি। উল্টে কাজ খতিয়ে দেখার জন্য কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছে রাজ্যে। এই বিষয়ে রাজ্যের শাসকদলের বক্তব্য হলো যদি কোথাও কিছু দূর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে প্রমাণ সাপেক্ষে তার সাজা দেওয়া হোক, কিন্তু কিছু মানুষের দূর্ণীতির জন্য রাজ্যের সব জব কার্ড হোল্ডাররা ভুগবে কেন ? পাশাপাশি তাঁদের হাতে একটি শক্তিশালী অস্ত্র তুলে দিয়েছে অতি সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী নিরঞ্জন জ্যোতি সাধ্বি-র লোকসভার অভ্যন্তরে পেশ করা একটি রিপোর্ট। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ভুয়ো জব কার্ডের সংখ্যা বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ বা রাজস্থান সহ বেশিরভাগ রাজ্য থেকেই অনেক কম। এই তথ্য হাতে নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবী কেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক তাদের প্রাপ্য বকেয়া আটকে রেখেছে।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বিভিন্ন প্রকল্পে মোট কত কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে।
১) প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বকেয়া প্রায় ৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
২) ১০০ দিনের কাজের ক্ষেত্রে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
৩) প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় বকেয়া প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এই বিপুল পরিমাণ বকেয়ার পাশাপাশি আর যে সব ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা রয়েছে সেগুলি হল স্বাস্থ্য দপ্তরের জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা মিশনের টাকা, মিড ডে মিলের টাকা, জিএসটি-র বকেয়া পাওনা ইত্যাদি। এছাড়াও অতীতের দু দুটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের (যশ ও আমফান) ক্ষতিপূরণের টাকাও কেন্দ্রের কাছে বকেয়া পড়ে রয়েছে। কেন্দ্রের কাছে এযাবৎকাল মোট যত টাকা রাজ্যের পাওনা তা সবমিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেই নবান্নের আমলা মহলের দাবী। তবে পুরনো বকেয়া বাদ দিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল লক্ষ্যই গ্রামীণ প্রকল্পে যে বকেয়া গুলো রয়েছে সেগুলো যাতে কেন্দ্রীয় সরকার তাড়াতাড়ি মিটিয়ে দেয় সেই দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে করা। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে রাজ্যের গ্রামীণ ভোটারদের কাছে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘দুর্নীতির বদলে কেন্দ্রের বঞ্চনা’ যাতে বেশি করে প্রমাণ করা যায় সেই লক্ষ্য থাকবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ মুখ্যমন্ত্রী খুব ভালো করেই জানেন লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় সরকার এই বকেয়া টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আবারও কোন গড়িমসি করবে।