Date : 2024-05-01

বিজেপিতে যোগদান করছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

ষষ্ঠী চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক ঃ রাষ্ট্রপতি ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দিলেন।মঙ্গলবার সকালেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী ৭ মার্চ এর রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরেই বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন তিনি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উপস্থিতিতেই বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন কলকাতা হাইকোর্টে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মেদিনীপুর থেকেই লোকসভায় প্রার্থী হতে পারেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।

কলকাতা হাইকোর্টে ২৯ টা বছর কাটিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথমে তিনি সরকারি প্যানেলের আইনজীবী ছিলেন। রাজ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষের হয়ে ২০১২ সাল থেকে একের পর এক মামলা সরকারের পক্ষে হয়েই সওয়াল করেছিলেন। তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হয়েছে তার রাজ্যের মানুষের কাছে আজ কোন অজানা নয়। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড় ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবাগিন্মম কাছে তার ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দেবেন।

আর কলকাতা হাইকোর্টের ১৭ নম্বর এজলাসের সেই চেয়ারটিতে দেখতে পাওয়া যাবে না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। তবে তার উপস্থিতি বারবার জানান দেবে যখন কোন দুর্নীতি প্রসঙ্গ উঠে আসবে।
রাজ্যের একের পর এক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডির হাতে তদন্তভার দেওয়ায় শাসকদলের নাবিশ্বাস তুলে দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একের পর এক নির্দেশে জেলে রয়েছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে মানিক ভট্টাচার্য সহ রাজ্যের একাধিক শাসকদলের হেভি ওয়েট নেতা বিধায়ক।বর্তমানে তারা গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশেই জেলের ভাত খাচ্ছেন। তবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় কে রাজনৈতিকভাবে আক্রমণ করতে এতোটুকু পিছু পা হয়নি শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস

রবিবাসরীয় দুপুরে রাজ্যবাসীর কাছে বোমা ফাটালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
তিনি আর বিচারপতি পদে থাকতে চাইছেন না। বিচার ব্যবস্থার মধ্যে থেকে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় কিন্তু বৃহত্তর মানুষের স্বার্থে তাদের উঠোনে পৌঁছাতে গেলে তাকে জনপ্রতিনিধি হতে হবে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারব্যবস্থায় থেকে বহু মানুষকে সুবিচার পাইয়ে দিয়েছেন তিনি ।তবে এখন দেখার বিষয় রাজনীতির ময়দানে এসে তার সেই সত্তা কতটা বজায় রাখতে পারেন সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্নের সমান বলে মনে করছেন হাইকোর্টের আইনজীবী মহলের একাংশ।

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সোমবার ছিল এজলাসে শেষ দিন। মানুষ চলে যায় ব্যক্তি চলে যায় কিন্তু চেয়ার কোনদিন ফাঁকা থাকে না। ১৭ নম্বর এজ্লাসটা হয়তো আগামী বেশ কয়েক দশক স্মরণে রাখবে রাজ্যবাসী বিশেষ করে বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীরা। সময়ের সাথে এই এজলাসেও আসবেন হয়তো নতুন কোন বিচারপতি। দুর্নীতির ইস্যুতে যেভাবে তিনি সরব হয়েছিলেন আগামী দিনে কতটা তা বজায় থাকবে তার উত্তর অবশ্যই সময় বলে দেবে।
দীর্ঘ সময় ধরে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী থেকে বিচারপতি হয়ে ওঠা বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আজ এজলাসে বসার পরেই আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য – “ডার্ক ডে ফর আস ” শুনে বিচারপতি হাসলেন।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কোর্ট অফিসারকে বললেন, ” আজ থেকে আর কোন মামলাই তিনি আর দায়িত্বে থাকছেন না তাই সমস্ত মামলা থেকে তিনি আজ অব্যাহতি নিয়ে নিলেন।

হাওড়া ডেলটা জুট মিলের শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের যে পিএফ সংক্রান্ত সমস্যা তাই ইতিমধ্যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে তা তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছে সেই মামলা প্রসঙ্গে এদিন বিচারপতি বলেন এই রেজিস্ট্রার ভিজিল্যান্স তদন্ত করছে।সেখানে রিপোর্ট বলছে ভেরি ভেরি সিরিয়াস অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট জেলা জজের বিরুদ্ধে। আমি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করবো তিনি যেন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন।যদি রিপোর্ট সত্য হয় তাহলে জেলা জজকে টারমিনেট করা উচিত বলে আমি মনে করি।বললেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।

বোলপুরের একটা মামলায় উপকৃত মহিলা এসেছিলেন তার উপকারের কথা জানাতে।প্রণাম করবেন বলে জানালে, বিচারপতি বলেন, “আমি পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম নি না।”একইসাথে আর এক মহিলা এসেছিলেন কিছু বলতে।কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “কেন ছেড়ে দিচ্ছেন আপনি?”যদিও বিচারপতি কোনো উত্তর না দিয়ে উঠে চলে চলে গেলেন।”