Date : 2024-04-28

পুরোনোর টানে সন্ধানী বইপ্রেমীরা

নাজিয়া রহমান, সাংবাদিক : সময়ের প্রবাহে নবীন প্রবীণ হয়, আসবাবপত্রে ক্ষয় হয়, সচল ঘড়ি অচল হয়। কিন্তু যা কিছু পুরনো সবই ফেলনা নয়। যা কিছু পুরনো সবই ফেলে দেওয়ার নয়। বইকে যাঁরা সই করেছে তাঁরা তা বিলক্ষণ জানেন। নতুন নয়, তাঁদের সন্ধানী চোখ খুঁজে বেরোয় ছেঁড়া, রংচটা, দূর ছাইকে।

মেলা বইয়ের বইমেলাতে নতুনেরই কদর। ঝকঝকে মলাট, চকচকে পাতা। নতুনের গন্ধে দূর থেকেই ঘোর লেগে যায় দূর দূরান্ত থেকে আসা পাঠকের। বঙ্কিম, রবীন্দ্র, শরৎ সাহিত্যের আলো মাখানো পথ বেয়ে সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ, সঞ্জীব, শংকর সরণি। লেন কিংবা বাই লেনে আজকের কবি, লেখক, প্রবন্ধকাররা। এরই মাঝে ধর্মকর্ম, রান্নাবান্না, আপনার হার্টকে ভালো রাখুন। কিন্তু নতুনের নাক যেমন উঁচু, দামও ততটাই। দুই ধরনের পাঠক তাই নতুনকে পাশ কাটিয়ে পুরনো মন্দিরেই মাথা ঠেকান। এক ধরনের পাঠক যাঁদের রেস্ত কম। আর এক ধরনের পাঠক, যাঁরা পুরনোতেই নতুনকে খুঁজে পান। এই যে সার সার বই দেখছেন এখানেই লুকিয়ে রয়েছে সেইসব অমূল্য রতন। শুধু খুঁজে নিতে হবে, বুঝে নিতে হবে। ১৯১৩ সালের এই ছেঁড়াখোঁড়া বইটা দেখুন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখিত গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ সং অফারিংস। লন্ডন থেকে প্রকাশিত এই বইয়ের প্রকাশক ম্যাকমিলান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। পুরনো বইয়ের দোকানে এভাবেই নিজের উপস্থিতি জানান দেয় চিরনতুন।

সুভাষচন্দ্র বসুর যাবতীয় লেখা নিয়ে সুভাষ রচনাবলী। একসময় এই বই সুলভ হলেও এখন দুর্লভই বলা চলে। সবকটা খণ্ড মেলে না। এখানেও সবকটা নেই। তবে যে কটা রয়েছে সেটাই বা কম কী। সন্ধানী পাঠক বেছে বেছে ঠিক বইটির কাছে ঠিক পৌছে যান। এরপর বিক্রেতা ও ক্রেতার মধ্যে দরদাম।

যদি ভাবেন এখানেই সব পাবেন তা নয়। এই ধরনের বই লুকিয়ে থাকে কলেজ স্ট্রিট-সহ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে পুরনো বইওয়ালাদের কাছে। সন্ধানী পাঠক পা ফেলে ফেলে ঠিক পৌঁছে যায় সেই বইটির কাছে। দেখা হয়ে যায় ভক্ত আর ভগবানের।