Date : 2024-05-01

মানুষকে কর্মে চেনা যায়, তার জেন্ডারে নয়- নারী দিবসে বার্তা দিলেন ট্রান্স ওম্যান সুচিত্রা দে

শাহিনা ইয়াসমিন, রিপোর্টার : নারীশক্তিকে বলা হয় আদ্যাশক্তি। সেই শক্তি যা জীবলোকে প্রাণকে বহন করে, যা প্রাণকে পোষণ করে। সেই নারী বহুবার লুন্ঠিত হয়, কলুষিত হয় সমাজের ঘাত প্রতিঘাতে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এমনই এক নারীর কথা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর…
নারী কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম যা লিখেছিলেন, তাই সত্য। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজ আজও পিতৃতান্ত্রিক। ২০২২ এসে দাঁড়িয়েও নারী অবহেলিত। দুই নারী সমাজ। একদিকের নারীরা তুলনামূলকভাবে শিক্ষিত, স্বাধীন ও আর্থিকভাবে স্বনির্ভরশীল। অন্যদিকে প্রান্তিক এক নারী সমাজ। যারা পর মুখাপেক্ষী৤ একদিকে বলা হয় মহিলারা পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারে। অপরদিকে চলার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সমাজের কদর্য চিন্তাধারা। সংকীর্ণ মানসিকতার শিকার হচ্ছেন বহু নারী। তার মধ্যে অন্যতম সুচিত্রা দে। সুচিত্রা ট্রান্স ওম্যান। পুরুষ থেকে নারী হতে গিয়ে তাঁর জীবনেও বহু বাধা এসেছে। তাঁর নিজস্বতা, তাঁর আমিকে খুঁজতে গিয়ে বহু কটুক্তির সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু পাল্টা লড়াইয়ের মানসিক প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছিলেন সুচিত্রাদেবী।

স্রোতের প্রতিকূলতা জয় করতে পেরেছেন সুচিত্রা। সমাজের চোখ রাঙানি তাকে। সমাজের চোখ রাঙানি তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি এখন ডোন্ট কেয়ার মনোবৃত্তিতে বিশ্বাসী। নিজের অস্তিত্ব খোঁজার পথে শুরুর দিকে মায়ের সমর্থন না পেলেও, পরবর্তী সময়ে সুচিত্রার কাজে গর্বিত হন তাঁর প্রয়াত মা।
ডবল এমএ, বিএড করার পর শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেন সুচিত্রা। সেন্ট অ্যান্ড্রু পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা সুচিত্রাদেবী। প্রথমে শিক্ষিকা হতে চাননি তিনি। গ্ল্যামার দুনিয়ার প্রতি টান ছিল তাঁর। পেশাগত দিক থেকে বহু বাঁধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি।
সুচিত্রাদেবী মনে করেন, নারী দিবস একদিন নয়, সব দিনই নারী দিবস। সমাজে মাথা উচু করে থাকতে গেলে শিক্ষাকে অস্ত্র করতে হবে প্রতিটি নারীকে। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে হতে হবে আত্মনির্ভরশীল।
পিতৃমাতৃহীন সুচিত্রার কেউ খবারখবর নেয়না। পরিবার-আত্মীয়স্বজন থাকা সত্ত্বেও দূরে একা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সুচিত্রা নিজের নারী সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রাম আজও করে চলেছেন। তার একটাই বক্তব্য মানুষকে কর্মে চেনা যায়, তার জেন্ডারে নয়।