Date : 2024-04-26

রাজ্য-রাজ্যপাল সমীকরণে নতুন মোড়। এখন শুধুই আমন্ত্রণ-নিমন্ত্রণের পালা।

সঞ্জু সুর, সাংবাদিক:- কালীপুজোয় আমন্ত্রণ আর পারিবারিক অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ‌। রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত এখন অতীত। এখন শুধুই সৌহার্দ্যের পালা। এখন শুধুই আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণের পালা। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় আমন্ত্রিত রাজ্যপাল নিমন্ত্রণ জানালেন মুখমন্ত্রীকে। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে নভেম্বরে চেন্নাই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমাদের রাজ্যে রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের সংঘাত কোনো নতুন ঘটনা নয়। তবে ট্র্যাক টু রাজনীতির অঙ্গ হিসাবে শাসকদলের একজন অবশ্যই থাকতেন যিনি রাজ্যপালের সঙ্গে সেই সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন যাতে প্রশাসনিক সংকট না হয়। এই জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে নিজের কাজ করে গিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তা সে তিনি পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবেই করুন বা বিরোধী দলনেতা হিসাবেই করুন। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার আগে গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলতেন রাজ্য বিধানসভার তৎকালীন বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সরকারে আসার পরেও পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবে কি এম কে নারায়নন বা জগদীপ ধনখড়, সবার সঙ্গেই একটা ‘লিয়াজোঁ’ মেনটেইন করে চলতেন তিনি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এখন জেলে আর জগদীপ ধনখড় এখন উপরাষ্ট্রপতি ভবনে। ফলে রাজ্যের নতুন অস্থায়ী রাজ্যপালের সঙ্গে সেই ‘লিয়াজোঁ’ মেনটেইন করে চলার কাজটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর একথা তো বিরোধীরাও মানেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি ব্যক্তিগতভাবে কারো সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেন তাহলে সেক্ষেত্রে তিনি সেটা করেন একেবারে হৃদয় দিয়েই। আমাদের রাজ্যের অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গণেশন এর ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই করছেন তিনি। কিছুদিন আগেই অসুস্থতা কাটিয়ে চেন্নাই থেকে কলকাতা ফেরেন মাননীয় রাজ্যপাল লা গণেশন। মুখ্যমন্ত্রী ও নবান্ন থেকে বের হয়ে সোজা রাজভবনে পৌঁছে যান। রাজ্যপালের শারিরীক অবস্থার খোঁজ নেন, বিজয়ার শুভেচ্ছা জানান। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই রাজ্যপালকে তাঁর বাড়ির কালীপুজোয় আমন্ত্রণ জানান। যে আমন্ত্রণ রক্ষা করতে কালি পুজোর দিন রাজ্যপাল স্বস্ত্রীক কালিঘাটে উপস্থিত হন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে নিজের বাসভবন ঘুরিয়ে দেখান। সূত্রের খবর, ওই ছোট্ট টালির বাড়ি দেখে যারপরনাই বিস্মিত রাজ্যপাল প্রশ্ন করেন এত ছোটো বাড়িতে আপনি থাকেন ! স্বভাবসিদ্ধ উত্তর দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজভবন ও কালীঘাট সূত্রে খবর, রাজ্যপাল‌ও আমন্ত্রণের প্রত্যুত্তরে নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে। তবে নিমন্ত্রণ কিন্তু রাজভবনে নয়, রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিমন্ত্রণ করেছেন একেবারে তাঁর নিজের বাড়িতে অর্থাৎ চেন্নাইতে। আগামি ৩ নভেম্বর রাজ্যপাল লা গণেশনের বাড়িতে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে (রাজ্যপালের দাদার জন্মদিন) মুখ্যমন্ত্রী কে নিমন্ত্রণ করেছেন। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী সেই নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। আগামি ২ নভেম্বর তিনি চেন্নাই উড়ে যাবেন, সেখান ৩ তারিখ রাজ্যপালের বাড়ির অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তারপর তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল লা গণেশন এর মধ্যকার এই সম্পর্কের হৃদ্যতা যদি এইভাবে বজায় থাকে তাহলে তা যে এরাজ্যের পদ্মশিবিরে যথেষ্ট উদ্বেগের সৃষ্টি করবে তা বলাই যায়।