ওয়েব ডেস্ক: সময়টা ৬০ দশক থেকে ৭০ এর দশকের মাঝামাঝি। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সঙ্গীতে হঠাৎ যেন উত্তাল হাওয়া। সলিল চৌধুরী, শঙ্কর-জয়কিষণ, ও.পি নায়ারের চেনা সুর হঠাৎ-ই মেতে উঠল ছক ভাঙার আনন্দে। মেলডির সুললিত চলনের শুরুতেই ‘পঞ্চম’ সুরে বেজে উঠল ড্রামস, স্যাক্সোফেন, ক্ল্যারিয়েনেটর মতো চড়া সুরের বাজনা। ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক সঙ্গীতে এই দুঃসাহসীক স্পর্ধার নামই আর ডি বর্মন। বলিউডে সে নবাগত, কিন্তু সঙ্গীত জগৎ-এ তাঁর হাতেখড়ি ভাটিয়ালি, লোকসঙ্গীতের ঘরানার সম্রাট শচীন দেব বর্মনের কাছে।
মুম্বই শহরে রোজের মতো প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে একদিন তংকালীন বলিউডের বিখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মন শুনেছিলেন, তিনি বলিউডে নবাগত খ্যাতনামা সুরকার রাহুল দেব বর্মনের পিতা। মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তখনও শাসন করছে সঙ্গীত জগৎ-এর রথী-মহারথীদের ক্লাসিক সুর। হেমন্তকুমার, মান্না দে, সলিল চৌধুরী সহ বাংলা থেকে উঠে আসা একঝাঁক সঙ্গীত নক্ষত্রদের ভিড় বলিউডে। ভায়োলিন, নাল, তবলার তালে ক্লাসিক সুর শুনে অভ্যস্ত বলিউড হঠাৎ শুনেছিল “চাহে কোই মুঝে জাংলি কাহে” গানের মধ্যে ঝন-ঝনে মিউজিক। গানের মধ্যে মহম্মদ রফির মতো রোমান্টিক গলায় শোনা গিয়েছিল চিৎকার! “ইয়া… হু”।
সময়টা ১৯৬৬ সাল, মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি পেয়েছিল আগামী দু দশকের সুরের জগৎ-এর এক নতুন অধ্যায়কে। সেই অধ্যায়ের নাম রাহুল দেব বর্মন। পাশ্চাত্য সঙ্গীত থেকে মধ্যপ্রাচ্যের সুরে তুলে আনা “শোলে” ছবির “মেহেবুবা মেহেবুবা”-র তালে হেলেনের প্রথম “বেলি ডান্স” দেখেছিল বলিউড ছবির দর্শকরা। আবার রাতের মুম্বই শহরের রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ফেরার সময় তৈরি করেছিলেন, “মুসাফির হু ইয়ারো… না ঘর হ্যায় না ঠিকানা…”. সেই সুরে গলা মিলিয়ে ছিলেন কিংবদন্তি সঙ্গীত শিল্পী কিশোরকুমার।
সঙ্গীত জগৎ-এর সবচেয়ে “টাফেস্ট টাইমে” রাহুল দেব বর্মন তৈরি করেছিলেন তাঁর পরিচয়। গ্লাস, চিরুনি, বদ্যযন্ত্রের মধ্যে কোন কিছুই ব্যবহারে সংকোচ করেননি। ‘মিউজিক’-এর সঙ্গে আপোশ করতে শেখেননি তিনি। শুধু তাই নয়, সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে নতুনদের সঙ্গে কাজ করেছেন কিংবদন্তী সুরকার রাহুল দেব বর্মন। বলিউডে উঠে আসা কুমার শানু, এস.পি বালা শুভ্রমণিয়ম এমন অনেক অপরিচিত মুখ পরিচিতি তৈরি করেছিলেন রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গে কাজের সুযোগ পেয়ে।
কয়েক দশকের বলিউডের সঙ্গীতের চলন এবং কয়েকটি বিশেষ গানের কলি দিয়ে রাহুল দেব বর্মনের ‘এক্সিলেন্স’ বিচার করা যেমন কঠিন তেমনই নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে ভারতীয় সঙ্গীত জগতে জ্বলন্ত নক্ষত্রের ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্তির কারণ খুঁজে বের করাও মুশকিল। পাশ্চত্য সঙ্গীতের ভারতীয়করণ এবং ভারতীয় সঙ্গীতের চলনে মাধুর্য্যের পরিবর্তনের কারিগর আর.ডি. বর্মনকে ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে ও তাঁর জন্মদিন স্মরণ করে আরপ্লাস নিউজের বিনম্র শ্রদ্ধার্ঘ্য দিতে হাজির হয়েছেন সঙ্গীত জগৎ-এর বর্তমান কলাকুশলীরা।